থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রির সিটিজেনদের জন্যে লাটভিয়ার নতুন ভিসা নীতিতে পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে
- Shimul Hossain

- Jun 19
- 3 min read
বিশ্ব এখন একবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে দাঁড়িয়ে অভিবাসন, নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জটিল বাস্তবতার মুখোমুখি। একদিকে উন্নত জীবনের আশায় মানুষ পাড়ি জমাচ্ছে এক দেশ থেকে আরেক দেশে, অন্যদিকে সেসব দেশগুলোর সরকার নিজেদের নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা রক্ষায় গ্রহণ করছে কঠোর পদক্ষেপ। এই প্রেক্ষাপটে লাটভিয়া সম্প্রতি তাদের ভিসা নীতিতে একটি বড় পরিবর্তন এনেছে, যা বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো থার্ড ওয়ার্ল্ড দেশের নাগরিকদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

লাটভিয়ার নতুন ভিসা নীতি: কী পরিবর্তন আসছে?
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে লাটভিয়া সরকার থার্ড ওয়ার্ল্ড দেশের নাগরিকদের জন্য প্রবেশ এবং অবস্থান নীতিতে কড়াকড়ি আরোপ করতে যাচ্ছে। যাদের লাটভিয়ার দেওয়া বৈধ ভিসা বা রেসিডেন্স পারমিট নেই, তাদের জন্য এই নতুন নীতি বাধ্যতামূলক হবে।
নতুন নীতির মূল উদ্দেশ্য হলো:
ন্যাশনাল সিকিউরিটি (জাতীয় নিরাপত্তা)
বর্ডার সিকিউরিটি (সীমান্ত নিরাপত্তা)
এই নীতির আওতায় ভ্রমণকারীদেরকে লাটভিয়ায় প্রবেশের অন্তত ৪৮ ঘণ্টা আগে অনলাইনে বিস্তারিত তথ্য জমা দিতে হবে, যেমন:
ভ্রমণের উদ্দেশ্য
অবস্থানের সময়কাল
গন্তব্যস্থলের ঠিকানা
ভ্রমণ রুট
যাতায়াত ও যোগাযোগের তথ্য
আত্মীয়দের পরিচয় ও পেশাগত প্রেক্ষাপট
যারা আত্মীয় স্বজনের আমন্ত্রণে লাটভিয়ায় যাচ্ছেন, তাদেরকে জানতে হবে আত্মীয়রা বর্তমানে বা অতীতে রাষ্ট্রীয়, সামরিক বা নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে যুক্ত ছিলেন কি না। উদাহরণস্বরূপ:
রাজনৈতিক ব্যক্তি
সরকারি কর্মকর্তা
বর্ডার গার্ড
কাস্টমস অফিসার
সিকিউরিটি ফোর্সের সদস্য
এই বিষয়গুলো যাচাইয়ের মাধ্যমে লাটভিয়া সরকার নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি এড়াতে চায়।
কারা এই নীতির আওতায় পড়বেন?
যদিও এই নিয়মগুলো মূলত রাশিয়া ও বেলারুশের নাগরিকদের লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে, তবুও সব থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রি যেমন বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাক, ইত্যাদি দেশের নাগরিকদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য হবে – যদি না তারা বৈধ ভিসা বা রেসিডেন্স পারমিট দেখাতে পারেন।
বাংলাদেশের অনেক মানুষ বর্তমানে ইউরোপে কাজ, শিক্ষা, ব্যবসা বা আত্মীয়দের মাধ্যমে অবস্থান করতে আগ্রহী। সেক্ষেত্রে এই নতুন নিয়ম আমাদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সংসদের সমর্থন ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতা
লাটভিয়ার সংসদ এই আইনটির পক্ষে সমর্থন দিয়েছে। কারণ ইউরোপের কিছু দেশ এখনও অনেক থার্ড ওয়ার্ল্ড দেশের নাগরিকদের যথাযথ যাচাই ছাড়া প্রবেশের অনুমতি দেয় – যা লাটভিয়ার মতে একটি বড় নিরাপত্তা হুমকি।
অস্থায়ী রেসিডেন্স পারমিটে সীমাবদ্ধতা
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, অস্থায়ী রেসিডেন্স পারমিটের মেয়াদ দুই মাসের বেশি রাখা যাবে না। অর্থাৎ যারা স্বল্পমেয়াদে থাকার পরিকল্পনা করছেন, তাদেরকে সময়মতো নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে হবে। যেকোনো ধরনের বিলম্ব বা নিয়ম লঙ্ঘন কঠিন পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য এর প্রভাব কী হতে পারে?
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক মানুষ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেতে আগ্রহী। এই প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে এবং একই সঙ্গে ভিসা নীতিগুলো কঠোর হয়ে উঠছে। লাটভিয়ার এই সিদ্ধান্ত ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোকে অনুপ্রাণিত করতে পারে – যারা ভবিষ্যতে একই ধরনের কড়াকড়ি আরোপ করতে পারে।
বিশেষত যারা ভিজিট ভিসা বা আত্মীয়স্বজনের আমন্ত্রণে লাটভিয়ায় যাওয়ার কথা ভাবছেন, তাদের জন্য এই নতুন নীতিগুলো একটি বড় সতর্কবার্তা।
করণীয় কী?
➡️সঠিক ও বৈধ তথ্য উপস্থাপন করুন
যেকোনো তথ্য জমা দেওয়ার আগে তা যাচাই করে নিশ্চিত হতে হবে। ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য জমা দিলে ভিসা প্রত্যাখ্যান হতে পারে।
➡️ভিসা প্রক্রিয়ায় সময় হাতে রাখুন
ভ্রমণের পরিকল্পনা করার আগে যথেষ্ট সময় হাতে রেখে আবেদন করা উচিত, কারণ নতুন তথ্য যাচাইয়ের জন্য প্রক্রিয়া কিছুটা দীর্ঘ হতে পারে।
➡️রেসিডেন্স পারমিট থাকলে হালনাগাদ রাখুন
যাদের আগে থেকে রেসিডেন্স পারমিট আছে, তারা যেন সময়মতো তা নবায়ন করেন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখেন।
➡️আইনগত সহায়তা নিন
যদি কারও পরিস্থিতি জটিল হয় – যেমন, আত্মীয়ের পরিচয় নিয়ে সন্দেহ বা পূর্বে কোনো সরকারি সংস্থায় চাকরি করার ইতিহাস থাকে – তাহলে ভ্রমণের আগে আইনি পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
লাটভিয়ার নতুন ভিসা নীতি আমাদের জন্য একটি সময়োপযোগী সতর্কতা। বিশ্বের বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রতিটি দেশ তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। ফলে আমাদেরও সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং যেকোনো বিদেশ যাত্রায় প্রয়োজনীয় তথ্য, কাগজপত্র ও আইনি সহায়তা নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।
আপনি যদি লাটভিয়া বা ইউরোপে ভ্রমণ বা স্থায়ীভাবে যেতে ইচ্ছুক হন, এখনই সময় সচেতন হওয়ার। নিয়ম জানুন, প্রস্তুত থাকুন, এবং নিরাপদ অভিবাসনের পথে এগিয়ে যান।
আপনি চাইলে এই ব্লগটি শেয়ার করতে পারেন বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে, যেন সবাই সতর্ক হয় এবং প্রয়োজনীয় তথ্য আগে থেকেই জানে।
_edited.jpg)



Comments