ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধের ফলে ইউরোপে এর প্রভাব
- Shimul Hossain

- Jun 24
- 2 min read
বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির সবচেয়ে উত্তপ্ত ইস্যুগুলোর একটি হচ্ছে ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি। এই দ্বন্দ্ব শুধু মধ্যপ্রাচ্যকেই নয়, প্রভাবিত করছে পুরো বিশ্ব অর্থনীতিকে—বিশেষত ইউরোপকে। আর এই প্রভাব থেকে দূরে নয় বাংলাদেশ ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোও। কেননা, আজকের বৈশ্বিক বাজার এমনভাবে সংযুক্ত, যেখানে একটি অঞ্চলের সংকট সারা পৃথিবীতে ঢেউ তুলতে পারে।

হরমুজ প্রণালী: বৈশ্বিক জ্বালানির লাইফলাইন
ইরান বিশ্বের নবম বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ। প্রতিদিন গড়ে ৩৮ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করে তারা, যার বেশিরভাগই রপ্তানি হয় হরমুজ প্রণালী দিয়ে। এই সরু একটি জলপথ দিয়ে প্রতিদিন বিশ্বের প্রায় ২০% তেল ও প্রচুর পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ হয়। ইউরোপ, চীন, ভারত, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো বড় বড় দেশ এই পথে নির্ভরশীল।
যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়?
ইরান যদি এই প্রণালী বন্ধ করে দেয়, তাহলে ইউরোপীয় দেশগুলো সরাসরি জ্বালানি সংকটে পড়বে। বিশেষ করে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি—যাদের আগে থেকেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতি চলছে। এমন পরিস্থিতিতে যদি তেলের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়, তাহলে ইউরোপে মূল্যস্ফীতি এবং শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
ইউরোপের অর্থনীতি কাঁপবে, বিশ্ববাজার কাঁপবে
বিশ্লেষকরা বলছেন, হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এতে ইউরোপে মূল্যস্ফীতি ০.৫% থেকে ১.৪% পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। উৎপাদন খরচ বাড়বে, পণ্যের দাম বাড়বে, এবং খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে গাড়ির খরচ পর্যন্ত সবকিছু সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে।
শিপিং খরচ বাড়ছে, সরবরাহব্যবস্থা হুমকিতে
ইতোমধ্যে জাহাজ পরিবহন খরচ ৬০% পর্যন্ত বেড়েছে। হরমুজ প্রণালী দিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকায় ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত প্রিমিয়াম নিচ্ছে, এবং শিপিং কোম্পানিগুলো তাদের চার্টার রেট বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে ইউরোপের আমদানিকারকেরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত, তেমনি বিশ্বব্যাপী পণ্য সরবরাহেও প্রভাব পড়বে।
আমাদের জন্য এর মানে কী?
বাংলাদেশ একটি আমদানি-নির্ভর দেশ। আমাদের দেশে খাদ্যদ্রব্য, সার, জ্বালানি এবং যন্ত্রপাতি আমদানির ওপর জোর রয়েছে। ইউরোপ বা গালফ অঞ্চলের সংকট আমাদের আমদানির খরচ বাড়িয়ে দিতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ে প্রভাব ফেলবে।
সামরিক দৃষ্টিকোণেও বিপদ বাড়ছে
যুদ্ধ শুধু বাণিজ্য নয়, সামরিক সংঘাতও বাড়িয়ে তুলছে। যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটো হস্তক্ষেপ করে, তাহলে ব্যাপারটি আরও বিস্তৃত রূপ নিতে পারে। এমনকি তা বিশ্বযুদ্ধে রূপ নিতে পারে—যা কারোই কাম্য নয়।
ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ শুধু তাদের দ্বিপাক্ষিক বিষয় নয়—এটি বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য এক বড় হুমকি। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের আভাস বহন করে। তাই আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং বিকল্প প্রস্তুতি গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
_edited.jpg)



Comments